শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
২৫৭

হিজাব: একটি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ

নিউজ ডেস্ক:

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০১৯  

ইংরেজি ভাষায় শ্রেষ্ঠ কবি willam Shakespere তার Hamlet: নাটকে নারী সম্পর্কে উক্তি করেছেন এভাবে, `Frailty thy name is woman' অর্থাৎ দুর্বলতার নামই হচ্ছে নারী। (বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে পর্দা, পৃষ্টা-১০)।

ইসলাম তাই পুরুষকে নির্দেশ দিয়েছে, ভালবাসা দিয়ে, শক্তি দিয়ে নারীর দুর্বল অস্তিত্বকে রক্ষা করতে। তাদের দেহটাই যেহেতু দুর্বল ও আকর্ষণীয় করে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু তাদের আপাদমস্তক পর্দার স্থান।

১ম পর্বের পর থেকে...

রসায়নবিজ্ঞান ভিক্তিক যুক্তি: মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ

‘মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর নিকটই হলো উত্তম আশ্রয়।’ (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৪)। 

উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ নারীকে পুরুষের জন্য আকর্ষণীয় বস্তু হিসেবে সৃষ্টি করার কথা বলেছেন। পুরুষের মাঝে নারীর জন্য রয়েছে যেমন আকর্ষণ। তেমনি নারীর মাঝেও রয়েছে পুরুষের জন্য আকর্ষণ। বর্তমান রসায়নবিজ্ঞানের গবেষণায় জানা যায় যে, নারীর শরীর অশ্লীয় বা এসিড ধর্মী। ফলে তাদের প্রস্রাবের সঙ্গে কিছু কিছু অম্ল বা এসিড (Acid)নির্গত হয়। এই অম্ল পূরণ করার প্রবৃত্তির জন্য তারা অম্ল তথা টক খেতে চায়। তাদের শরীরের কোমলত্ব,সৌন্দর্য ও লাবণ্যের মূল কারণ এই অম্লত্ব। পক্ষান্তরে পুরুষের শরীর
ক্ষারকীয়। ফলে তাদের প্রস্রাবের সঙ্গে কিছু কিছু মিষ্টি জাতীয় ক্ষার বা এ্যালকালি  (Alkali)নির্গত হয়। এটি পূরণ করার স্বাভাবিক প্রবত্তির কারণে তারা ক্ষার জাতীয় বস্তু তথা মিষ্টি খেতে পছন্দ করে। এই ক্ষারের ক্ষতির কারণেই পুরুষের মধ্যে বহুমূত্র রোগের আধিক্য দেখা যায়। অম্লের (Acid)সঙ্গে ক্ষারের একটা
স্বাভাবিক আকর্ষণ রয়েছে। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় Affinity (আসক্তি)। এই আকর্ষণ খুবই তীব্র এবং সূক্ষ্ন। এটি বৈজ্ঞানিক সত্য যে,ক্ষার-ধর্মী শরীর ও অম্লধর্মীর শরীরের মধ্যে একটা প্রাকৃতিক তীব্র
আকর্ষণ রয়েছে। (বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে পর্দা, পৃষ্ঠা-১১)।

যার কারণে নারী-পুরুষ উভয়ই পরস্পরের প্রতি আকর্ষিত হয়। আর এ আকর্ষণের কথাই বলা হয়েছে উপরের উল্লেখিত আয়াতে। এই আকর্ষণের ফলেই দেখা যায়  নারী-পুরুষের যৌন আকর্ষণ। যার ফলে পুরুষ তার প্রাকৃতিক দাবী নারীর কাছে এবং নারী তার প্রাকৃতিক চাহিদা পুরুষের কাছে লাভ করেন এবং তারা উভয়ে পরস্পরের কাছে সম্পর্কিত থেকেই লাভ করেন সুখ ও প্রশান্তি। এ বিজ্ঞানময় ব্যবস্থাপনার কারণেই অটুট আছে মাবন বুনিয়াদ। আর এ আকর্ষণের জন্যই আল্লাহ নারীদেরকে তার সৌন্দর্যকে পর-পুরুষ থেকে নিরাপদ দুরত্বে রাখার জন্য পর্দার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।

দৃষ্টি সংযত রাখা: আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।’ (সূরা: নূর, আয়াত: ৩০)।

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা: নূর, আয়াত: ৩১)।

উল্লেখি আয়াতগুলোতে আল্লাহ তায়ালা মুমিন পুরুষ  ও নারীদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত করতে বলেছেন এরপর যৌনাঙ্গের হেফাজত করতে বলেছেন। কারণ নৈতিক কিছু করার আগে মানুষের চোখই তথা দৃষ্টিপাতই প্রথম ভূমিকা পালন করে। যা একালের বিজ্ঞানের গবেষণায় স্পষ্ট।

প্রথম দেখাতেই মানুষের মন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আবেগতাড়িত হওয়ার বিষয়টি বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন,এরকম আবেগতাড়িত হতে সেকেন্ড পাঁচ ভাগের এক ভাগ সময়ই যথেষ্ঠ। দেখার পর আবেগে পড়ার অনুভূতির সঙ্গে সঙ্গে মস্তিস্কের ১২টি অংশে এর প্রভাব পড়ে। তখন চার ধরনের প্রভাব হরমোন নিঃসরণের কারণে দেহে-মনে ছড়িয়ে পড়ে ভালো লাগা। এবং দু‘জনই দু’জনার প্রতি তীব্র টান অনুভব করেন। (কোকেনসম প্রেম-দৈনিক কলের কন্ঠ-২৭/১০/২০১০ইং)।

উল্লেখিত আয়াতে আরেকটি বিষয় পরিলিক্ষিত হয় যে, মহান আল্লাহ নারীদের চেয়ে আগে পুরুষদের দৃষ্টি সংযত করার কথা বলেছেন। বৃটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির অন্যতম সদস্য‘আলেকজান্ডার গর্ডন’ জানিয়েছেন, নারী-পুরষ উভয় পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ হওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে পুরুষরা এগিয়ে। অর্থাৎ কোনো মেয়েকে প্রথমবার দেখার পর একজন পুরুষের মনে যতটা সহজে আকর্ষণ অনুভূতি তৈরি হয় মেয়েদের মনে ততটা সহজে হয় না। (প্রথম দেখায় প্রেম-দৈনিক ইত্তেফাক-০৭/০৯/২০১০ইং)।

আধুনিক বিজ্ঞান বলেছে, নারীর চোখ ও দেহকোষ পুরুষের কামুক লোভাতুর দৃষ্টি পতিত হলে একপ্রকার রাসায়নিক ক্রিয়া সাধিত হয়। ফলে প্রবল ঝড় বইতে থাকে নারীর দেহে ও মনে এবং সৃষ্টি হয় উত্তেজনার। এটি গর্ভবতী নারীদের ওপর এক অধিক ক্রিয়াশীল হয় যে, এর প্রতিফলিত রশ্নি জরায়ুর অভ্যন্তর ভাগ ভেদ করে পতিত হয় গর্ভস্থ সন্তানের ওপরও। ফলে দেখা দেয় নারীদেহে দুর্বলতা, ব্যাপকভাবে কমতে থাকে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। এ কারণে গর্ভাবস্থায় নারীর মনে যে ছবিটি দাগ কাটে,গর্ভের সন্তান শারীরিক কাঠামো ও ব্রেণের দিক দিয়ে সেরুপই হয়ে থাকে। দৃষ্টিপাতকারীর চরিত্র ও অভ্যাস রেখাপাত করে গর্ভের 
সন্তনের ওপর। (বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে পর্দা, পৃষ্ঠা-১৪)।

শত শত বছর আগে পবিত্র কোরআনের দেয়া ঘোষণা আজকে এভাবেই বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত হচ্ছে।

দৃষ্টি সংযত রাখার মাধ্যমে গর্ভস্থ ক্রণ থাকে সুরক্ষিত: পদার্থ বিজ্ঞানে আলোর প্রতিফল (Refection of light) বলতে একটা ব্যাপার আছে। এর ক্রিয়া যে কত সূক্ষ্ন এবং অন্তর্ভেদী, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। মানব-দেহ হচ্ছে কতগুলো Cell বা কোষের সমন্বয়। মেয়েদের শরীরের কোষগুলো সাধারণত দুর্বল।

গর্ভধারণকালে এগুলো অত্যাধিক দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে পুরুষ শরীরের প্রতিফল-ক্রিয়া রোধ করার ক্রিয়া শক্তি একেবারে হারিয়ে ফেলে। এর ফলে গর্ভাবস্থায় পর-পুরুষের দৃষ্টি নিক্ষেপের ফলে প্রতিফলিত আলোক রশ্নিক গর্ভস্থ ভ্রণের গঠন (Configuration) বিকৃত করতে পারে। এ জন্যই কোনো কোনো সময় দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী উভয়েই ধার্মিক, চরিত্রবান-চরিত্রবতী হওয়া সত্বেও তাদের সন্তান বদ-ধার্মিক দুশ্চরিত্রবান কিংবা অন্য কোনো পুরুষের চেহারার মত হয়েছে। এটি হয়েছে প্রতিফলন ক্রিয়ার ফলে। এ জন্যই অনেকে তাদের মেয়েদেরকে গর্ভাবস্থায় পর পুরুষের নিকটে যেতে দেয় না। (বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে পর্দা, পৃষ্ঠা-৮)। ফলে তাদের গর্ভস্থ ভ্রণ থাকে সুরক্ষিত।

সংগ্রহে: প্রিয়ম হাসান

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর