বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৪ ১৪৩১   ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
সর্বশেষ:
ঈদের সময় রেমিট্যান্স এসেছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা হিটলারের চেয়েও ভয়ংকর নেতানিয়াহু: ওবায়দুল কাদের দ্বাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসছে ২ মে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬.১ শতাংশ: এডিবির পূর্বাভাস চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি দুটি যুদ্ধ জাহাজের পাহারায় আমিরাতের পথে এমভি আব্দুল্লাহ চাল আমদানির অনুমতি পেল আরও ৫০ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেন বিজিপির আরও ১৩ সদস্য
২৫০

‘শেখের বেটিকে’ দেখতে সম্মেলনে শতবর্ষী ইসহাক আলী

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯  

বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে শরীর। এরপরও লাঠি ভর দিয়ে তিনি এসেছেন আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে। তিনি শতবর্ষী ইসহাক আলী মাস্টার। 

তৃণমূল থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিদের দেয়ালে দেয়ালে ঘুরছে তার ছবি।তাদের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও পুরনো এই সহযোদ্ধাকে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

ইসহাক আলী কুষ্টিয়ার আব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, দলীয় সমর্থনে চার বার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তিনি। এলাকার মানুষের কাছে ইসহাক আলী মাস্টার নামে পরিচিত এই রাজনীতিক ১৫ দিন আগেও কুষ্টিয়া সদর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তার ছোট ছেলে আলী মর্তুজা খসরু কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।

সম্মেলন চলার মধ্যেই ইসহাক আলী মাস্টারের সঙ্গে কথা হয় গণমাধ্যমকর্মীদের।

এই শরীর নিয়ে শীতের মধ্যে কেন সম্মেলনে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শেষ ইচ্ছা, শেখের বেটিকে এক নজর দেখার।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় দলের এই সম্মেলনে অংশ নিতে পেরে কেমন বোধ করছেন জানতে চাইলে ইসহাক আলী বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও আওয়ামী লীগের ঢাকার সম্মেলন, আমার জেলা কুষ্টিয়ার সম্মেলনে আমি অংশ নিয়ে আসছি সারা জীবন। এখনও মিছিল, আন্দোলনসহ সব কর্মসূচিতে যোগ দিই।

আওয়ামী লীগ আমাদের বংশগত, রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে আমি পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি।

আওয়ামী লীগে যুক্ত হওয়া কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৫০ সালে প্রথম যশোরে আওয়ামী লীগের মিটিং হয়। সেই মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী সাহেব যশোরে মিটিং করেছেন, সেখানে আমি ছিলাম। সেই থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার পথ চলা।

রাজনীতিতে জড়ানোর কারণ ব্যাখ্যায় ইসহাক আলী বলেন, ১৯৪৮ সালে রেসকোর্স মাঠের পাশে কার্জন হলে জিন্নাহ সাহেব (মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ) যখন এক জনসভায় ঊর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষণা করলেন, তখনই আমাদের মন উঠে গেলো মুসলিম লীগ থেকে। মনে হলো আমরা কি তাহলে মুসলীম লীগ করে ভুলই করলাম না কি? তখন আন্দোলনের কোনো সাথী আমরা পাই নাই। তবে মুসলীম লীগ সরকারের ওপরে একটা অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ভাষা আন্দোলন, হাবিবুর রহমান শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিসংগ্রামসহ সব আন্দোলনে সম্পৃক্ততার স্মৃতিচারণও করেন ইসহাক আলী।

ভাষা আন্দোলনের আগে ১৯৫০ সালে যশোরের চাঁনমঞ্জিলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করার স্মৃতি রয়েছে তার।

ওটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। এখনও দলকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। এটা বলতে পারেন আমার নেশা। যে যা-ই বলুক, দেশটার স্বাধীনতার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীন করেছে বলেই সারা বিশ্বে বাংলাদেশ একটি পরিচয় নিয়ে দাঁড়াতে পেরেছে।”

বঙ্গবন্ধুকেই এই বাংলার প্রথম স্বাধীন শাসক মনে করেন ইসহাক আলী মাস্টার।

তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে বাংলার স্বাধীন নবাব বলা হলেও তিনি এ অঞ্চলের ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুই প্রথম এই অঞ্চলের প্রথম বাঙালি শাসক।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে চার নীতির ওপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তার দলের কেউ কেউ এখন সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করে না বলে মন্তব্য করেন ইসহাক আলী।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শকে আঁড়কে ধরা উচিত সবার। বঙ্গবন্ধু নিয়ম করেছিলেন ২৫ বিঘার কম জমি যাদের তাদের খাজনা মাফ হয়ে যাবে। কিন্তু তার পরবর্তীতে জিয়ার সময়, বিচারপতি সাত্তারের সময় সেই খাজনা নেওয়া শুরু হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণায় ফিরে আসা উচিত।

বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও আন্দোলন-সংগ্রামের সাক্ষী ইসহাক আলী বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনীতি করা খুব মুশকিল ছিল। কেউ আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়ে চলতে পারত না, কথা বলতে পারত না। তবুও গ্রামে আমাদের যে লোকগুলো ছিল তাদের সাথে নিয়ে চলতাম।

“১৯৮৫ সালে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকন্যার চিঠি পেয়েছিলাম, যে কোনো উপায়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রতিহত করতে হবে। সেই কর্মসূচিও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সফলভাবে পালন করেছি।”

সম্মেলনে অংশ নেওয়া ইসহাক আলীর বড় ছেলে আলী হায়দার স্বপন জানান, তার বাবা ১০১ বছর বয়স পার করেছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে তিনি জড়িত। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কুষ্টিয়ার আব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চার বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছোট ছেলে আলী মর্তুজা খসরু বলেন, “এবারের সম্মেলনে আমরা তিন প্রজন্ম হাজির হয়েছি। বাবা এসেছেন। আমি, আমার ভাই এবং বড় ভাইয়ের ছেলে এসেছি।

আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম, বিপ্লব বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ অনেকেই ফেইসবুকে ইসহাক আলীর ছবি পোস্ট করে সম্মেলনে স্বাগত জানিয়েছেনএই শতবর্ষী নেতাকে ।

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর