শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
৬৪৩

মুজিবনগরে চকলেট বিক্রেতা থেকে স্বাবলম্বী মিহিদুল

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০১৯  

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ভবরপাড়া গ্রামের ফজলুল মল্লিকের ছেলে মিহিদুল ইসলাম (৩০)। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি। দুই ভায়ের মধ্যে মিহিদুল ছিলেন ছোট। ছেলেবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল একজন বড় ব্যবসায়ী হওয়ার। কঠোর পরিশ্রম আর সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত তার স্বপ্ন সফল হয়েছে। সামান্য চকলেট বিক্রেতা থেকে তিনি আজ একজন সফল ব্যবসায়ী।

২০০১ সালে বন্যার পর, তখন তার বয়স ছিল আনুমানিক ১০ বছর। তখন থেকেই তিনি মুজিবনগর কমপ্লেক্সের ভেতর দর্শনার্থীদের কাছে ঝাঁপিতে করে চকলেট বিক্রি করতেন। এই সূত্রে তিনি ধীরে ধীরে বুঝতে থাকেন ব্যবসার কলা-কৌশল। তখন থেকেই বড় ব্যবসায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন। ব্যবসার জন্য কিছু টাকা জোগাড় করতে তিন বছর পর শুরু করেন ঝাল-মুড়ির ব্যবসা। ঝালমুড়ি বিক্রি করতে করতে আরও দুই বছর পার হয়ে যায়। পরবর্তীতে চকলেট বিক্রি ও ঝাল-মুড়ির ব্যবসা করে যে টাকা সঞ্চয় করেন, তা দিয়ে ২০০৫ সালের দিকে মুজিবনগরে একটা ছোট চায়ের দোকান দেন। সেখান থেকে শুরু হয় তার স্বপ্ন পূরণের পথে যাত্রা। 

২০০৭ সালের দিকে মুজিবনগর উপজেলা পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের (আরএসএস) আওতায় সুদমুক্ত একটি ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্সে ঢুকতে মেইন গেটের সামনে একটি দোকান নিয়ে ফাস্টফুডের মালামাল তুলে ব্যবসাটাকে বড় করেন। আর এই ব্যবসার মাধ্যেমে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। আস্তে আস্তে তিনি ব্যবসায় ভালো লাভবান হতে থাকেন। তার এই ব্যবসার মাধ্যেমে বর্তমান তিনি স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। সেই সঙ্গে হয়ে উঠেছেন একজন সফল ব্যবসায়ী। বর্তমানে তিনি ফাস্টফুড, কসমেটিকসসহ সাতটি দোকানের মালিক। আর তার এই সকল দোকান থেকে আরও কয়েকজন যুবকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

এ বিষয়ে মিহিদুল ইসলাম জানান, আমি একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পরিবারের অভাব ঘোচাতে আমি ছোট থেকে কিছু করার চেষ্টা করতাম। কখনো চকলেট বিক্রি, কখনো বাদাম বিক্রি করতাম। এসব বিক্রি করতে করতে আমার ইচ্ছা জাগে আমি একজন বড় ব্যবসায়ী হব। সেই থেকে কখনো আমি পিছুপা হইনি। অনেক কষ্ট ও কোঠর পরিশ্রম করে আজ আমি এই জায়গায় উঠে আসতে পেরেছি। আর আমার এই সফলতা হবার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সমাজসেবা অফিস।

স্থানীয় চাঁদ আলী জানান, মিহিদুল ভাই অনেক ছোট থেকে চকলেট বিক্রিসহ নানান ধরনের ব্যবসা করতেন। আমরা দেখতাম তার ব্যাবসা করার প্রতি অনেক চেষ্টা। তার এই প্রাণপণ চেষ্টায় তিনি আজ সফল ব্যবসায়ী হিসাবে পরিণত হয়েছেন। তার এই সফলতা দেখে আমাদের খুবই ভালো লাগে।

এ ব্যাপারে মুজিবনগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রব জানান, আমাদের এখান থেকে উদ্যোগী ব্যবসায়ীদের পল্লী সেবা কার্যক্রম (আরএসএস) এর আওতায় সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। আমি যখন জানতে পারি, মিহিদুল ইসলাম তার ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে একটি বড় ব্যবসা করার উদ্যোগ নিয়েছে, অথচ টাকার জন্য সেটা সফল করতে পারছে না। তারপর গ্রাম ও পরিবার জরিপের মাধ্যেমে তার আর্থিক অবস্থা বিচার করে তাকে এই ঋণ কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এবং তার হাতে পল্লী সামাজিক কার্যক্রমের অর্থ স্টিম তুলে দেওয়া হয়। আর সেই ঋণের টাকাসহ তার কিছু গচ্ছিত টাকা দিয়ে সে নতুন করে একটি দোকান দেয়।

সমাজসেবা কর্মকর্তা আরো জানান, মিহিদুলের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কোঠর চেষ্টায় সে বর্তমানে একজন সফল ব্যবসায়ী। আমি তার এই সফলতাকে সাধুবাদ জানায়। আমাদের ঋণ গ্রহীতাদের জন্য তার এই সাফল্য অনুকরণীয় হবে বলে আমি আশা করি।

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর