শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
২৬৭

মিরপুরে পদ্মায় বিলীন কৃষি জমি ঘরবাড়ি!

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০১৯  

প্রমত্তা পদ্মায় কমছে পানি ভাঙছে পাড়, স্থাপনা আর বাড়িঘর। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ভাটিতে পদ্মার ডানপাড়স্থ কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া ও তালবাড়িয়া দুই ইউনিয়নের সাত কি.মি. এলাকায় প্রবল ভাঙনে অনেক কৃষিজমি, বাড়িঘর, সরকারি স্থাপনা, স্কুল-মাদ্রাসা ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে। 

এছাড়া উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র মহাসড়কটিও চরম ঝুঁকিতে। এ এলাকায় ভাঙনের অন্যতম কারণ হিসেবে অবৈধ বালুঘাটকে চিহ্নিত করে অবিলম্বে দীর্ঘদিনের এ ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। 

সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া যাবে। জানা যায়, দীর্ঘ ১৫ বছরের নদীভাঙনে ৯টি গ্রামবিশিষ্ট ১৮ দশমিক ৮৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩টি গ্রামসহ ১৮ দশমিক ৮৬ হেক্টর জমির মধ্যে অন্তত সাড়ে ৪০০ হেক্টর কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে সাড়ে ৭০০ কৃষক পরিবার এখন ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। 

ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানার অভিযোগ, একদিকে ভয়াল পদ্মার ভাঙনে জায়গাজমি, বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন হচ্ছে, সেইসঙ্গে সাম্প্রতিককালের ভাঙনের জন্য প্রধানত দায়ী অবৈধ বালুঘাট। এখানে সরাসরি নদী থেকে পানিমিশ্রিত বালু নদীর মধ্যে থেকে দু’তিনশ’ মিটার দূরে সমতল কৃষিজমিতে পাহাড় সমান উঁচু করে রাখা হচ্ছে। এ বালুর পানি ভূ-গর্ভস্থ হয়ে নদীর পানির সঙ্গে মিশে যাওয়ার ফলে গলন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সমতল জমি ধসে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। 
এদিকে বিগত ১০ বছরের নদীভাঙনে ১৪টি গ্রামবিশিষ্ট ১৬ দশমিক ২৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭টি গ্রামসহ ১ হাজার ৬৪৫ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে সাড়ে ৭০০ হেক্টর আবাদি জমি ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে প্রায় এক হাজার কৃষক পরিবার সবকিছু হারিয়ে এখন গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা হয়েছেন। 

তালবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান মণ্ডল জানান, দীর্ঘদিনের ভাঙনে ইতিমধ্যে ইউনিয়নের তিন ভাগের দু’ভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে। সর্বশেষ এখন যেভাবে ভাঙছে তাতে মিরপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে শিগগিরই তালবাড়ি ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কটিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। জরুরি ভিত্তিতে পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তার। 

সরেজমিন ভাঙনপ্রবণ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে বালুর বস্তা ফেলে ঠেকানোর চেষ্টা কাজের তদারকি থাকা শাখা কর্মকর্তা অসীম সরকার বলেন, এখানকার ভাঙনের যে তীব্রতা তাতে আমরা জনবল লাগিয়ে যা ফেলছি তার সবই গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে। এর একমাত্র সমাধান বড় কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, পদ্মার ভাঙনকবলিত ৭ কি.মি. এলাকায় ভাঙন রোধে ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ টিমের পরামর্শক্রমে প্রকল্প প্রণয়ন ও প্রেরণ করা হয়েছে। সেটা এখন প্রি-একনেক পর্যায়ে আছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। অনুমোদন পেলে এ ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর