শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
৪২৫

খোকসার সমাজসেবক দ্বিজেন স্যার পরলোকে

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯  

খোকসাকে ঢাকা বানানোর কারিগর ও স্বপ্নদ্রষ্টা বাবু দ্বিজেন্দ্রনাথ বিশ্বাস চলে গেলেন না ফেরার দেশে। খোকসার এই মহাপুরুষের মহাপ্রস্থানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিভিন্ন মহলে। 

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাতটায় একতাপুরের খাগড়বাড়িয়ার নিজ বাসগৃহে তিনি ৮৭ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন। 

ব্যক্তিজীবনে দ্বিজেন স্যার আজকের খোকসা সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রাখেন। শোনা যায়, নিজের ঘরের চালা থেকে ঝাড়ের বাঁশ পর্যন্ত কলেজ প্রতিষ্ঠায় দান করেছিলেন। সর্বোপরি খোকসা বা এর আশপাশ এমনকি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে তিনি অনন্য। দ্বিজেন স্যারই সর্বপ্রথম খোকসার মানুষকে কোট-টাইয়ের সাথে পরিচিত করান। তৎকালীন সময়ে তিনিই প্রথম খোকসার মানুষ হিসেবে নিয়মিত যশোর টু ঢাকা, ঢাকা টু যশোর বিমান ভ্রমণ করতেন। 

দ্বিজেন্দ্রনাথ বিশ্বাস খোকসা-জানিপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। এইচএসসি পাশ করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ না করেই ফিরে আসেন তার নাড়িপোঁতা খোকসাতে। ফিরে এসেই দলবল নিয়ে শুরু করলেন খোকসা কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ। 

কলেজ প্রতিষ্ঠার পর কলেজে ইংরেজি পড়ানোর দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন রোভার স্কাউটসেরও। পাবনার হেমায়েতপুরের সৎ সংঘতে তিনি নিয়মিত ভ্রমণ এবং অবস্থান করতেন। 

এছাড়াও স্বাধীনতা উত্তর পরবর্তী সময়ে সিলেট, খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশ জুড়ে এক্সটেনসিভ ট্যুর করেছেন। মাসশেষে বেতন নিয়ে খুব কমবারই বাড়িতে দিয়েছেন। অকাতরে দান করার স্বভাব থাকার কারণে নিজের পকেট থেকে সবই দরিদ্র মানুষের সেবায় দিয়ে গেছেন। সব চেয়ে বড় কথা হলো এই মানুষটি কখনো কাউকে ছোট করে দেখতে পারতেন না এবং দেখতেন না। 

উনি কখনো হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ করতেন না। সেজন্য এক ভদ্রলোক দ্বিজেন স্যারের জন্য মক্কা নগরী থেকে পবিত্র কোরআন শরীফ নিয়ে আসলে স্যার সেই কোরআন শরীফ মাথায় তুলে নিয়েছেন। যেবার আমেরিকা থেকে স্যারের ছাত্র আকতার হোসেনের সাথে জর্জ, স্টিভ ও বব নামের তিনজন মার্কিনি এসেছিলেন। তখন তিনি বাংলা, হিন্দি, উর্দুসহ ইংরেজি ভাষায় গান গেয়েছিলেন। তিনি অনেক লিখেছেন, সারাক্ষণ লিখেছেন। বিশেষ করে ইংরেজিতে তিনি প্রচুর সনেট কবিতা রচনা করেছেন।

খোকসার এই প্রবাদপুরুষ তিন পুত্র সন্তান, সহধর্মিনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেলেন।

তার মৃত্যুতে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান,  কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ, খোকসা উপজেলা কল্যাণ সমিতি-ঢাকা, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ফোরাম ঢাকা, খোকসা সরকারি কলেজ, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগ, খোকসা উপজেলা যুবলীগ, খোকসা উপজেলা সাংস্কৃতিক সংসদ (উসাস), খোকসা প্রেসক্লাবসহ উপজেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে।

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর