বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৮ রমজান ১৪৪৫

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
সর্বশেষ:
২৬ দিনের ছুটি পাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেট্রোরেলের মতিঝিল-কমলাপুর অংশে ভায়াডাক্ট স্থাপন শুরু চীনের পর বাংলাদেশের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার আসিয়ান দেশে কমেছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের সংখ্যা ৫০ হাজার মেট্রিক টন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন
২৯৭

খাবার সামনে এলে নবীজির (সা.) দোয়া ও এর মর্মার্থ

নিউজ ডেস্ক:

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০১৯  

হাদিস শরিফে এসেছে, যখন কোনো খাদ্যদ্রব্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের সামনে পরিবেশন করা হত, তখন তিনি এই দোয়া করতেন, 
الحمدلله الذى رزقنيه من غيرحول منى ولا قوةٍ

‘সমস্ত প্রশংসা আলাহ তায়ালার যিনি আমাকে আমার শক্তি সামর্থ্য ছাড়াই রিজিক দিয়েছেন।’ (তিরমিযী, আবুদাউদ, ইবনে মাজাহ,(আহমদ)।

পর্ব-১ এর পর থেকে...

খানা সামনে এলে পড়ার দ্বিতীয় দোয়া: খানা সামনে এলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেকটি দোয়া পড়তেন। তা হলো,

اللهم بارك لى فيه وانعمنى خيرامنه

‘আয় আল্লাহ এই খানার মধ্যে আমার জন্য বরকত দান করুন, এবং আগামীতে এর চাইতে উত্তম খানার ব্যবস্থা করুন, (মেরকাত ৬/৩৬৪)।

উল্লিখিত দোয়ার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি বাক্য উপস্থাপন করেছেন। প্রথম বাক্যে বলেছেন, এই খাদ্যে আমার জন্য বরকত দান করুন, এদদ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আয় আল্লাহ এই রিজিক আপনার দান। যতক্ষন পর্যন্ত আপনি এর মধ্যে বরকত না দেবেন ততক্ষন পর্যন্ত এই খানা আমার জন্য মঙ্গল জনক হবে না, আপনি বরকত না দিলে এই খাদ্য আমার ক্ষুধা নিবারণ করতে পারবে না।

বরকতের অর্থ: কেননা বরকতের অর্থ হলো অল্প জিনিস কিন্তু অধিক উপকারী। তাই এখানে বরকত প্রার্থনা করা হয়েছে। অর্থাৎ আমার সামনে যে খাবার এসেছে, তা আমার ও আমার পরিবারের জন্য যথেষ্ট বানিয়ে দিন। এবং এদদ্বারা আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করুন। খাদ্যে বরকত না থালে অধিক খানা হলেও পেট অপূর্নই থেকে যায়, এ গেল বরকতের এক অর্থ।

বরকতের দ্বিতীয় অর্থ: বরকতের আরেক অর্থ হলো, এই খানা যখন দেহে প্রবেশ করবে তখন তা শক্তিও সুস্থতার অসিলা হবে, রোগ শোকের কারণ হবে না, অন্যথায় এমনও হতে পারে যে সামনে দেয়া খানা সুস্বাদু মনে করে অতিরিক্ত খেয়ে নিলে, ফলে বদহজমের কারণে বমি ও ডায়রিয়া শুরু হলো। একবার অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে তিনদিন বিছানায় পড়ে থাকলে। এর অর্থ হলো খানা সুস্বাদু ছিল, স্বাস্থা সম্মতও ছিল, বরকত ছিল না। একারণেই খানা সামনে আসার পর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া করতেন আয় আল্লাহ আমি জানি এই খানা আপনার দান। এবং বহু বড় নেয়ামত। কিন্তু এই নেয়ামত সেই সময় উপকারী হবে, যখন আপনি বরকত দেবেন, তাই আমি আপনার কাছে ভিখেরির মত এই প্রার্থনা করছি, আয় আল্লাহ এই খাদ্যে আমার জন্য বরকত দান করুন।

বরকত তালাশ কর: বিভিন্ন হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানার মধ্যে বরকত তালাশ করার জন্য তাগিদ প্রদান করেছেন, এবং বলেছেন তোমরা যখন খানা শুরু করবে তখন 

بسم الله وعلى بركةالله

(আল্লাহ তায়ালার নামে শুরু করছি এবং আল্লাহ তায়ালার বরকত প্রার্থনা করছি) বলবে। (তাফসিরে সাআলাবী)

অনুরূপভাবে খানা খাওয়ার সময় যদি আঙুলে খানা লেগে থাকে তা হলে খানা শেষ করার পর আঙুল চেটে খাবে কিংবা অন্য কাউকে খাইয়ে দেবে। এদ্বারা আল্লাহ তায়ালার দেয়া রিজিকের ও নেয়ামতের অবমুল্যায়ন করা হয় না। কেননা সাধারণত আঙুলে কিছু না কিছু খাবার লেগেই থাকে। এই অবস্থায় যদি হাত ধুয়ে ফেলা হয়, তা হলে খাবারের অসম্মান ও অবমূল্যায়ন করা হবে।

আঙুল চাটার মধ্যে বরকত: আঙুল চাটার আকেটি ফায়েদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা জান না, তোমদের খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে। হতে পারে যেই খাবার তোমরা খাচ্ছ তাতে কোনো বরকত নেই । কিন্তু খাবারের যে অংশ তোমাদের আঙুলে লেগে আছে, আল্লাহ তায়ালা তাতেই বরকত রেখেছেন। এ কারণেই বলা হয়েছে, আঙুল চেটে খাও।

তিন আঙুলে খাওয়া: হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ আঙুল ডুবিয়ে খানা খেতেন না । তিনি বরং সব সময় তিন আঙুলে খানা খেতেন, ছোট ছোট লোকমা নিতেন। অবশ্য সেযুগের খাবার সাধারণত শুকনো জাতীয় জিনিস হত। মোট কথা, খানা সামনে এলে সর্বপ্রথম তিনি বরকতের দোয়া করতেন। 

এর চেয়ে উত্তম খাবার দিন: আলোচ্য দোয়ার দ্বিতীয় বাক্যে বলা হয়েছে, وانعمنى خيرامنه আয় আল্লাহ আমাকে এর চেয়ে উত্তম খাবার দান করুন, কেননা আমরা আপনার দান ও দয়ার পরম অনুগত। আল্লাহ তায়ালার কাছে মুখাপেক্ষী হয়ে প্রার্থনা করবে। দাসত্বের দাবিও হলো, মানুষ আল্লাহ তায়ালার কাছে মোহতাজ ও মুখাপেক্ষী বান্দার মতো করে প্রার্থনা করবে।

হজরত আইয়ুব (আ.) এর ঘটনা: বোখরী শরিফে হজরত আইয়ুব (আ.) এর ঘটনা এসেছে, একবার তিনি গোসল করছিলেন। এমন সময় তার ওপর স্বর্নে তৈরি প্রজাপতি পড়তে লাগল। ফলে তিনি গোসল রেখে সেগুলো কুড়াতে শুরু করলেন। এমন সময় আল্লাহ তায়ালা বলনে, আইয়ুব, আমি তোমাকে প্রথম থেকে বহুত ধরনের নেয়ামত দান করেছি। এর পরও তুমি স্বর্ণের পেছনে দৌঁড়াচ্ছ? হজরত আইয়ুব (আ.) উত্তর দিলেন, আয় আল্লাহ  নি:সন্দেহে আপনি আমাকে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। আমি সে সবের শোকরিয়া আদায় করে শেষ করতে পারব না। কিন্তু আপনি যখন আরো দান করছিলেন, আয় আল্লাহ আপনি যখন আরো দান করছিলেন আয় আল্লাহ, আপনার দেয়া বরকত ও নেয়ামত থেকে অমুখাপেক্ষী থাকতে পারি না, আপনি যেহেতু দিচ্ছেন, তাই আমি নিজেকে তার মুখাপেক্ষী মনে করে সেগুলো সংগ্রহ করে নিচ্ছি। لاغنى بى عن بركتك আমি আপনার বরকত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না। কারণ আমি আপনার মুখাপেক্ষী।

মাথা যেন খারাপ না হয়: সুতরাং এমন যেন না হয় যে, কারো সামনে উত্তম ও সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হলো, তখন তার মাথা খারাপ হয়ে যায় আর ভাবতে থাকে আমি বোধ হয় সর্বশ্রেষ্ট খাবার পেয়ে গেছি। এখন আমার আর অন্য খাবারের প্রয়োজন নাই। দোয়ার এই অংশটুক এ জাতীয় চিন্তা ভাবনার ওপর ইতি টেনে দিয়েছে। এ সময় বরং ভাববে, আপনি যা কিছু দান করেছেন, নি:সন্দেহে তা অনেক বড় নেয়ামত। এই নেয়ামতের শোকর আদায় করা আমার পক্ষে সম্ভব না, তবে এখনো আমি আপনার দান দক্ষিনার মুখাপেক্ষি। তাই আপনার সমীপে আমার প্রার্থনা হলো, আয় আল্লাহ আমার জন্য আরো উত্তম খানার ব্যবস্থা করুন। 

সার কথা: এখন চিন্তার বিষয় হলো, যে ব্যক্তি খানা সামনে আসার পর, খাওয়া শুরু করার পূর্বে এই স্বীকার করে যে, আয় আল্লাহ এই খানা আপনার দান, এজন্য আমি আপনার প্রশংসা করছি। এর মধ্যে আমার শক্তি সামর্থ্যের এতটুকু দখল নেই, আয় আল্লাহ আমি আপনার কাছে এই খাবারের বরকত প্রার্থনা করছি এবং ভবিষ্যতে এর চেয়ে উত্তম খাবার আশা করছি। আল্লাহ তায়ালা কি এই খাবারের মাধ্যেমে তার ভিতরে নুর সৃষ্টি করে দেবেন না? এমন ব্যক্তির পানাহারের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবশ্যই বরকত আসবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এই দোয়া পড়ার তাওফিক দান করুন, আমিন। 

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর