শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০  

দেশের প্রথম স্কুল অ্যাপ ‘শিক্ষায়তন’

নিউজ ডেস্ক

কুষ্টিয়ার বার্তা

প্রকাশিত : ১০:৫৩ এএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ সোমবার

শিক্ষাকে পুরোপুরি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশে প্রথম বারের মতো মোবাইল অ্যাপে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্কুল ‘শিক্ষায়তন’ নামে এ অ্যাপ আবিষ্কার করেছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা। শিক্ষায়তন অ্যাপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য শিখন ব্যবস্থাপনা অ্যাপ হিসেবে পরিচিত পাচ্ছে।

এরই মধ্যে এ শিখন ব্যবস্থা অ্যাপ কুমিল্লার তিনটি উপজেলার পাঁচটি স্কুলে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে পরিচালনা করা হচ্ছে। স্কুলগুলো হলো- কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কালেক্টরেট স্কুল, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই আশরাফ স্কুল, ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ওশান হাইস্কুল এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার কুমিল্লার শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা বলেন, প্রথমে আমরা কুমিল্লা জেলার সব স্কুলে এটি বাস্তবায়ন করতে চাই। পরবর্তীতে সরকার বড় পরিসরে পুরো বাংলাদেশে এটি ছড়িয়ে দিতে পারে। এটা সরকার বিবেচনা করবে।

বছরের শুরুতেই অ্যাপভিত্তিক শিখন কার্যক্রম হাতের মুঠোয় পেয়ে খুশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও এ অ্যাপ হতে পারে বেশ কার্যকর। অনেক আগে থেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে শিখন কার্যক্রমকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে। তবে এই প্রথম বাংলাদেশের স্কুল কলেজের জন্য এক নতুন ধরনের লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উদ্ভাবন করলেন ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও সোহেল রানা।

শিক্ষায়তন নামে এ লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম একটি স্যাস (সফটওয়্যার অ্যাজ এ সার্ভিস) মডেল অনুসারে তৈরি করা ই-সার্ভিস অ্যাপ্লিকেশন, যাতে দুইটি ওয়েব বেজড প্ল্যাটফর্ম এবং একটি মোবাইল অ্যাপ। পুরো সিস্টেমটির স্পেসিফিকেশন ডিজাইন করেছেন ইউএনও। এই ডিজাইনটি বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসন পরবর্তীতে বিজনেস একসিলারেট বিডি নামে একটি টেকনোলজি পার্টনার নিযুক্ত করে, যারা সফলভাবে এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডেভেলপ করে। এ প্ল্যাটফর্মে স্কুলের সব কার্যক্রম প্রধান শিক্ষক ওয়েব প্ল্যাটফর্মে এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মোবাইল অ্যাপে করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি কোর্স আলাদাভাবে সাজানো আছে।

কোর্সে সব ক্লাসের আলাদা সেকশন আছে, যেখানে শিক্ষকরা অতিরিক্ত লার্নিং ম্যাটেরিয়াল জমা করতে পারবেন এবং শিক্ষার্থীরা তা দেখতে পারবেন। শিক্ষকরা অ্যাপে লেকচার নোট আপলোড করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের গ্রুপে ভাগ করতে পারবেন, ক্লাসে নোটিফিকেশন পাঠাতে পারবেন, অ্যাসাইনমেন্ট দিতে পারবেন ও জমা নিতে পারবেন। এছাড়া গ্রেডও বসাতে পারবেন। ক্লাসে বসে সফটওয়্যার ব্যবহার করে শিক্ষকরা হাজিরা নিতে পারবেন। অর্থাৎ স্কুলের সব কার্যক্রম মোবাইল অ্যাপে করতে পারবেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে প্রত্যেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর রয়েছে নিজস্ব ওয়েব পেজ।

কুমিল্লার সাবেক জেলা প্রশাসক এবং বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আমি জেলা প্রশাসনে যোগ দেওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করে আসছি। কাজ করতে গিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী করে তোলার কথা মাথায় আসে। ব্রাহ্মণপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা শিক্ষাক্ষেত্রে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আধুনিকায়নের কথা বললে আমরা সেই অভাব পূরণের লক্ষ্যে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। পরবর্তীকালে তা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেই। সেখান থেকেই মূলত শিক্ষায়তনের যাত্রা শুরু।

শিক্ষায়তনের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন বিজনেস একসিলারেটের সিইও কামরুল হাসান সুমন। তিনি বলেন, এ ধরনের সফটওয়্যারের ব্যবহার দেশে নেই। দেশে প্রচলিত সফটওয়্যারগুলোতে ক্লাস রুমে কী পড়ানো হচ্ছে সে বিষয়টি সংযোগ করার অপশন কম। শিক্ষায়তনের মাধ্যমে অভিভাবক জানতে পারবেন তার বাচ্চারা কী পড়ছে। যেগুলো আছে তাদের অধিকাংশ কনটেন্ট নির্ভর সেবা দেয়। জেলা প্রশাসন থেকে এরকম সফটওয়্যারের ডিজাইন অভাবনীয়। আমরা এই উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত এবং ভবিষ্যতে এটিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছুক।

ভগবান সরকারি স্কুলে শিক্ষায়তন বাস্তবায়ন করছেন বিজ্ঞান শিক্ষক মহিউদ্দিন পলাশ। তিনি জানান, শিক্ষায়তন এমন একটি সফটওয়্যার যেখানে শ্রেণি কার্যক্রমের সবকিছু রয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মোবাইলের মাধ্যমে উন্নত মানের শিক্ষা সেবা গ্রহণ করতে পারবে। অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষকদের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। বিশেষ করে তদের টিচিং প্ল্যান সাজানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে www.sikkhayton.gov.bd ইউআরএলের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপের নাম ‘শিক্ষায়তন’ অথবা ‘sikkhayton’ নামে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি পাওয়া যাবে। শিক্ষায়তন নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে চাইলে আগ্রহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসন, কুমিল্লা অথবা উপজেলা প্রশাসন, ব্রাহ্মণপাড়ার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।