বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৩ ১৪৩০  

প্রখ্যাত আলেম ইউসুফ আল কারজাভি আর নেই

কুষ্টিয়ার বার্তা

প্রকাশিত : ১১:০৬ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার

কাতারে নির্বাসিত বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম স্কলার ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্ষীয়ান আলেমেদ্বীন শায়খ ড. ইউসুফ আল-কারাজাভি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা ও সৌদি সংবাদ মাধ্যম আল-আরাবিয়া ইউসুফ আল-কারজাভির টুইটার অ্যাকাউন্টের বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

কয়েক মাস ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে খবরে জানানো হয়েছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। শায়খ ইউসুফ আল-কারজাভির জানাজা আগামীকাল মঙ্গলবার বাদ আসর কাতারের ইমাম মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।

সোমবার তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট জানাজার সময়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে।  

শায়খ প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-কারজাভি (১৯২৬-২০২২)  মিশরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী আধুনিক ইসলামি তাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ। মুসলিম ধর্মতত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সে এর সাবেক চেয়ারম্যান। 

আধুনিক উদ্ভূত নানা জটিল সমস্যার সাবলীল ও গভীর ইজতিহাদভিত্তিক সমাধানমূলক শতাধিক গবেষণা-গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। তার গ্রন্থগুলো প্রকাশের পরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে জ্ঞানী, গবেষক, বোদ্ধামহল ও সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে।

ইজতিহাদে ভারসাম্যপূর্ণ মতামত এবং ইসলামের পুনর্জাগরণে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমন্বিত পরিকল্পিত আন্দোলনকামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে শায়খ ইউসুফ আল-কারাজাভি বর্তমানে সারা পৃথিবীতে অনন্য।  

শায়খ কারাজাভির জন্ম ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। দুই বছর বয়সে বাবা ইন্তিকাল করলে চাচা তার লালন-পালন করেন। দশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করেন।

হিফজ সম্পন্ন করে আল-আজহার কারিকুলামে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে জাতীয় মেধায় দ্বিতীয় হন। প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুদ দ্বীন অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯০-৯১ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের Scientific Council এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন । ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন। 

শায়খ ইউসুফ কারাজাভি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন একাডেমিক সংস্থার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ (Royal academy for Islamic culture and research), ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (OIC), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামি এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি আয়ারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফাতওয়া অ্যান্ড রিচার্জের (European Council For Fatwa and Research) প্রধান হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।

বাংলাদেশের সঙ্গেও শায়খ আল-কারাজাভির জ্ঞানভিত্তিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আধুনিক ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়া দারুল মাআরিফ আল-ইসলামিয়া চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীর সঙ্গে তার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। দারুল মাআ’রিফের সহকারী পরিচালক মরহুম ড. জসীমউদ্দীন নদভীর সঙ্গেও তার হৃদ্যতা ছিল।

শায়খ ইউসুফ কারাজাভি ১৪১১ হিজরিতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরষ্কার লাভ করেন। ইসলামি শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন । ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরষ্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও তার বৈচিত্র্যময় পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি নানা পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন । তার অন্যতম কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার :  কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ,  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পদক, মালয়েশিয়া, আন্তর্জাতিক পবিত্র কোরআন সম্মাননা পুরস্কার, দুবাই, সুলতান হাসান আল বলকিয়াহ সম্মাননা, ব্রুনাই, আল-ওয়াইস পদক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ছয়. জর্ডানের মেডেল অব ইন্ডিপেন্ডেন্স।