বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৩ ১৪৩০  

জাতিসংঘে শক্তিশালী অবস্থানে বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক:

কুষ্টিয়ার বার্তা

প্রকাশিত : ১২:৪৬ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার

স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটাতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভলপমেন্ট পলিসি’র (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় গ্র্যাজুয়েশনের মানদণ্ড পূরণ ও উত্তরণে চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করবে বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবে।

মঙ্গলবার সিডিপির এলডিসি উত্তরণ সংক্রান্ত ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আয়োজিত এক্সপার্ট গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজ। বৈঠকে একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে সম্প্রতিক সময়ে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থান তুলে ধরেন ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষ্যে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধাসমূহ আরও বেশি সময় অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

সভায় আশা প্রকাশ করা হয়, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য সিডিপি-এর ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের সকল মানদণ্ড পূরণ করবে। একইসঙ্গে উক্ত উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষ হতে সিডিপি-এর নিকট ২০২১ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচবছর মেয়াদী প্রস্তুতিকালীন সময় প্রদানের আহ্বান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ গত ২০১৮ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত সিডিপি-এর সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছিল। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোন দেশ পরপর দু’টি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করে।

সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী উত্তরণের সুপারিশ লাভের পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকালীন সময় ভোগ করতে পারে। আগামী মাসে ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় উত্তরণের সুপারিশ লাভের পর পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল শেষে বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েশন ২০২৬ সালে কার্যকর হবে। প্রস্তুতিকালীন এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে। বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপনকালে ইআরডি সচিব বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হতে চলেছে যখন সমগ্রজাতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে।

তিনি তাঁর উপস্থাপনায় সামষ্টিক অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে অভূতপূর্ব সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে তার ওপর আলোকপাত করেন। একইসঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য যে সমস্ত সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে তা কাজে লাগানোর জন্য সরকার সকল পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে কি কি ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে-গ্রহণ করবে তাও তিনি তাঁর উপস্থাপনায় তুলে ধরেন। ইআরডি সচিব উপস্থাপনায় উত্তরণ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধাসমূহ অব্যাহত রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান এবং টেকসই উন্নয়ন অভিষ্টসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে উন্নয়ন অর্থায়নের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক মহলের নিকট আহ্বান জানান।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মিজ রাবাব ফাতিমা, জেনেভায় বাংলাদেশের জাতিসংঘ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, ইআরডির যুগ্ম-সচিব ও সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আজিজসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সমূহের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সিডিপির সভাপতি মি. হোসে আস্তনিও অকাম্পোসহ সিডিপির উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন গতিধারার ভূয়সী প্রশংসা করেন।