শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১  

৭৪ শতাংশ বস্তিবাসীর দেহে প্রতিরোধক সৃষ্টি

নিউজ ডেস্ক:

কুষ্টিয়ার বার্তা

প্রকাশিত : ০১:২৪ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার

রাজধানীর বস্তিবাসীদের ৭৪ শতাংশই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলেছে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

এদের সবার মধ্যেই আইজিএম ও আইজিজি ইমুনোগ্লোবিন-এম ও ইমুনোগ্লোবিন-জি) গড়ে উঠেছে বলে রোগ তত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও আন্তর্জাতিক কলেরা গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকার ৪৫ শতাংশ মানুষের মধ্যে গড়ে উঠেছে প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এই ৪৫ শতাংশের মধ্যে আইজিএম ও আইজিজি নামক অ্যান্টিবডি গড়ে উঠেছে। উল্লেখ্য, শরীরের এই দু’ধরনের অ্যান্টিবডি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে।

আইসিডিডিআরবির সিনিয়র বিজ্ঞানী ও মিউকাসল ইমিউনোলজি অ্যান্ড ভ্যাক্সিনোলজি ইউনিটের প্রধান ড. ফিরদৌসি কাদরী করোনাবিষয়ক উপস্থাপনায় বলেন, কোনো ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য অ্যান্টিবডি গড়ে তুলে। শরীরে টি সেল ও বি সেল ছাড়াও অ্যান্টিবডি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং ভাইরাস অকার্যকর করে দিতে অথবা ভাইরাসকে নিরপেক্ষ করে দিতেও অ্যান্টিবডি কাজ করে। তিনি বলেন, ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে প্রথমে তা প্রতিরোধক ব্যবস্থা আইজিএম তৈরি হয় এবং আইজিএম স্বল্প সময়ের জন্য শরীরে থাকে। কিন্তু ভাইরাস প্রবেশের পর অনেক দিন পর্যন্ত শরীরে আইজিজি থাকে।

ড. ফিরদৌসি কাদরী বলেন, করোনাভাইরাসের লক্ষ্মণ রয়েছে রোগীদের চেয়ে লক্ষ্মণ নেই এমন রোগীদের দেহে অনেক বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে। মৃদু লক্ষ্মণ রয়েছে এমন করোনার রোগীদের দেহে প্রথম এক মাস শতভাগ আইজিজি নামক অ্যান্টিবডি থাকে। আর করোনায় সংক্রমিত কিন্তু লক্ষ্মণ নেই এমন রোগীদের দেহে ৪৫ শতাংশ আইজিজি নামক অ্যান্টিবডি থাকে। অন্য দিকে করোনায় সংক্রমণের দুই সপ্তাহ পর্যন্ত মৃদু লক্ষ্মণ রয়েছে এমন রোগীদের ৭২ শতাংশ পর্যন্ত আইজিএম অ্যান্টিবডি থাকে। করোনায় আক্রান্ত কিন্তু লক্ষ্মণ নেই এমন রোগীদের দেহে আইজিএম ২২ শতাংশ পর্যন্ত আইজিএম অ্যান্টিবডি থাকে।

আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির গবেষকরা ঢাকা শহরের তিন হাজার ২২৭টি খানার (হাউজহোল্ড) করোনার লক্ষ্মণ রয়েছে এমন ৫৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৩৩ জনের দেহে করোনার অ্যান্টিবডি পেয়েছেন। আবার লক্ষ্মণ নেই এমন ৮১৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫৯ জনের দেহে অ্যান্টিবডি পেয়েছেন। অন্য দিকে ঢাকা শহরের বস্তিগুলোর মধ্যে থেকে ৯৬০ খানার করোনার লক্ষ্মণ রয়েছে এমন ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৬ জনের দেহে অ্যান্টিবডি পেয়েছেন তারা। একই খানার লক্ষ্মণ নেই এমন ৩২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৯ জনের নমুনার মধ্যে অ্যান্টিবডি পেয়েছেন।

ড. ফিরদৌসি কাদরী বলেন, গত জুলাই মাসে ঢাকার বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ সময় থাকে আইজিজি নামক অ্যান্টিবডি উচ্চ হারে পাওয়া গেছে। বস্তিতে আইজিজি সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে এপ্রিল মাসে এবং এপ্রিল মাসেই গবেষণাটি শুরু হয়। বস্তিবাসীদের মধ্যে আইজিজি পাওয়া গেছে ৭১ শতাংশ এবং আইজিএম পাওয়া গেছে ৩৩ শতাংশ। বস্তিবাসী ছাড়া ঢাকা শহরের অন্যান্য অংশের মানুষের মধ্যে আইজিজি পাওয়া গেছে ৪৪ শতাংশ এবং আইজিএম পাওয়া গেছে ৩৯ শতাংশ।

গবেষণার ফল হিসেবে বলা হয়েছে, ঢাকার মানুষের মধ্যে উৎসাহব্যঞ্জক প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫ ওয়ার্ডের একটি করে মহল্লার মানুষের মধ্যে এই গবেষণা করা হয়। প্রতি মহল্লা থেকে ১২০টি খানা এতে অংশ নেয়।