মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ২ ১৪৩১  

সেই ‘জিনের বাদশা’ গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক 

দৈনিক কুষ্টিয়া

প্রকাশিত : ০৮:৫৪ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

নানা প্রলোভনে অন্যের পকেটের টাকা নিজের করে নিতে সিদ্ধহস্ত তিনি। টার্গেট তার সমাজের প্রতিষ্ঠিত নারী-পুরুষ। গৃহপালিত ‘টিভি জিন’ আর  ‘মোবাইল জিন’ও নাকি রয়েছে তার দলে!

সব মুশকিল আসানের আশ্বাসে গণমাধ্যম ও ক্যাবল টিভি অপারেটরদের নিজস্ব চ্যানেলে বিভিন্ন মাজারের নাম ব্যবহার করে প্রথমে তিনি বিজ্ঞাপন দেন। আর চটকাদার ওই বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পড়ে একবার কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই কেল্লাফতে। ছলে-বলে-কৌশলে সেই ভুক্তভোগীর শেষ টাকাটাও হাতিয়ে নেন সুমন ও তার সিন্ডিকেট। এভাবে মানুষের দৈনন্দিন নানা সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়ে গত সাত বছরে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দ্রপুরী ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে চক্রটির মূল হোতা কথিত জিনের বাদশাহ সুমনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা।

জান্নাত আরা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র বিভিন্ন সময়ে জিনের বাদশা, দয়াল বাবা সেজে বিভিন্ন সমস্যার সামাধান দেবে বলে বিজ্ঞাপন তৈরি করে। চক্রটি লটারি ও গুপ্তধন প্রাপ্তি, জটিল রোগ থেকে মুক্তি, পাওনা টাকা আদায়, দাম্পত্য কলহ, ভালোবাসার মানুষকে বশে আনাসহ যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারে বলে প্রলোভন দেখায়। হুজুরের ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে নিয়ে যায় চক্রটি।

জান্নাত আরা বলেন, ‘সোহেল মোল্লা নামে এক ব্যক্তি এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ৪২ লাখ ২৫ হাজার টাকা হারিয়েছেন। তাকে লটারি পাইয়ে দেবে বলে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার, ব্যাংক ও বিভিন্ন মাধ্যমে টাকাগুলো হাতিয়ে নেয় চক্রটি। গত ২২ জুলাই ভোলার বোরহান উদ্দিন থানায় এ অভিযোগে একটি মামলা করেন সোহেল মোল্লা। এরপর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুমনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জান্নাত আরা বলেন, ‘মাসিক ২০ হাজার টাকা দিয়ে তৈয়েবুর রহমান নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন, বর্তমান দিনকাল ও চিত্রবাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন তারা। ওই বিজ্ঞাপনে তারা বিভিন্ন দরবার শরিফের নাম ব্যবহার করে যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিতে পারেন বলেও প্রচার করতেন। এসব বিজ্ঞাপন দেখে সাধারণ মানুষ তাদের ফোন করলে জিনের বাদশাহ ওই ব্যক্তিদের সমস্যার সামাধান করতে পারবেন বলে টাকা আত্মসাৎ করতেন।’

সৈয়দা জান্নাত বলেন, ‘সম্প্রতি জুবায়ের আহমেদ সুমনের তিন সহযোগী জাফর ইকবাল ওরফে কাজল, সাগর এবং ছামিরকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এর মধ্যে জাফর ইকবাল ও সাগর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে সুমনের নাম উঠে এসেছে। সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জুবায়ের আহমেদ সুমনের নামে গত ২০১১ সালে ৫ ডিসেম্বর বোরহান উদ্দিন থানায় একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তার পাঁচ বছরের সাজা হয়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বোরহান উদ্দিন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শাহ আলম বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক প্রতারণার ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন দেখে সহজেই প্রতারণার শিকার হয় সাধারণ মানুষ। আমরা দেখেছি ঢাকার এক শিক্ষিত গৃহবধূ প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে সাতে লাখ টাকা হারিয়েছেন। আমরা এই কথিত জিনদের দুইভাগে ভাগ করেছি। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে টিভি জীন আর একটি হচ্ছে মোবাইল জীন।’

ডিআইজি আরও বলেন, ‘টিভি জিনের কাছে গিয়ে মানুষ নিজেরাই প্রতারিত হন। আর মোবাইল জিন ফোন করে ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছে আনে।’