বুধবার   ২২ মার্চ ২০২৩   চৈত্র ৭ ১৪২৯   ২৯ শা'বান ১৪৪৪

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
সর্বশেষ:
ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হলো চুয়াডাঙ্গা জেলা সেবা দ্রুত বাড়াতে ৯৯৯-এ যুক্ত হচ্ছে কলার লোকেশন ট্র্যাকার সব মসজিদে একই পদ্ধতিতে তারাবি পড়ার আহ্বান
৬৩

৪৮ বছর ধরে দেশে বিখ্যাত চুয়াডাঙ্গার ব্লাকবেঙ্গল গোট

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

জেলায় ব্লাকবেঙ্গল গোটের সম্প্রসারণ বেড়েছে। দিনে দিনে ব্যাপকভাবে এই ব্লাকবেঙ্গল গোট বৃদ্ধি পাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার এই ব্লাক বেঙ্গল গোট জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মিটাতে সক্ষম হচ্ছে । এই ব্লাকবেঙ্গল গোট লালন পালন করে এ জেলার বেকারত্ব দুর হচ্ছে। এতে বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ ।

গ্রামের হতদরিদ্র নারীরা এই জাতের ছাগল লালন-পালন করে তারা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এতে চুয়াডাঙ্গায় ব্লাকবেঙ্গল গোটের খামারের সংখ্যা বাড়ছে। এতে কম খরচে এ ব্লাক বেঙ্গল গোট লালন পালন করে অধিক মুনাফা পেয়ে লাভবান হচ্ছে।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় বলছে, এ ব্লাকবেঙ্গল গোট আরও বৃদ্ধি করানোর জন্য পরিকল্পনা করছে সরকার। একই সাথে প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিদের পাশে থেকে সহযোগিতা করবে বলে জানায় চুয়াডাঙ্গা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়। 

জানা যায়, ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হয় চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছাগল লালন-পালন। এরপর থেকে নতুন ভাবে ধীরে ধীরে শুরু হয় ব্লাকবেঙ্গল গোট জাতের নামে ছাগল লালন পালন। গায়ের রং দেখতে অনেকটাই কুচকুচে কালো।

এ ব্লাকবেঙ্গল গোট লালন পালন করে গ্রামীণ হতদরিদ্র নারীদের জীবনের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। এরা হচ্ছে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী। ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বাজেট করে ২ টা ব্লাকবেঙ্গল গোট জাতের ছাগি  কিনে আস্তে আস্তে লালন পালন করে। এ জাতের ছাগি  বছরে বাচ্চা দিচ্ছে ১ টা করে। এরপর থেকে প্রতি বছরে বাচ্চার সংখ্যা দাড়াঁছে ২ টা করে । এই ভাবে বংশ বিস্তার বাড়াতে প্রতিটা বাড়িতে এখন ব্লাক বেঙ্গল গোট ছাগলের খামারে পরিণত হচ্ছে। এতে পাল্টে যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গার চিত্র।

প্রতিটা ছাগলের পিছনে এক বছরে লালন পালনে খরচ হচ্ছে ৭ হাজার টাকা। এতে ১৮ মাস ছাগলের বয়স হলে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকাই বাজারজাত করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে ছাগল লালন পালনকারি মালিকেরা। প্রতিবছরে ব্লাকবেঙ্গল গোট লালন পালন করে বাজারে বিক্রি করে মুনাফা দাড়িঁয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এতে পাল্টে যাচ্ছে হতদরিদ্র নারীদের জীবনের চিত্র। এরা একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ পারছে ঠিক তেমনি বাচঁতে পারছে নতুন ভাবে। এতে আস্তে আস্তে ব্লাক বেঙ্গল গোটের সম্প্রসারণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রাণী সম্পদ সুত্রে জানা যায়, এবার এ জেলায় মোট এই জাতের ছাগলের সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার আর খামার আছে ৩১ টি এবং অতিরিক্ত খামার আছে ৪৫ টি খামার। আর চুয়াডাঙ্গা উন্নয়ন সরকারি ছাগল খামারের ১০টি সেডে মোট প্রায় ৭০০ ব্লাক বেঙ্গল ছাগল আছে। গত বছরে তুলনাই এবার এ ফার্মে ১৫০ টি ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বৃদ্ধি পেয়েছে । ৪৮ বছর ধরে দেশ বিখ্যাত চুয়াডাঙ্গার ব্লাকবেঙ্গল গোট।

এসময় কথা হয়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কুন্দিপুর গ্রামের এক খামারি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি এটকা দুইটা করে এ জাতের ছাগল পালন শুরু করি । এখন আমার একটা ব্লাকবেঙ্গল গোটের খামার তৈরি হয়েছে। এই খামারে আমার ছাগল আছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টা। আর এতে প্রচুর লাভজনক। আমি প্রতিবছরে প্রায় ৫০ খেকে ৬০ টাকা এ জাতের ছাগল বিক্রি করে লাভবান হয়। এটা একটা লাভজনক খামার। আমাদের এ জাতের ছাগল দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে থাকে।

অপর খামারি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা মোমিনপুর গ্রামের রাবিয়া খাতুন নিউজজি কে বলেন, আমি এ জাতের ছাগর লালন পালন করে এখন আমি স্বাবলম্বী। আমার খামারে ব্লাকবেঙ্গল ছাগল আছে প্রায় ৬০ টা। এতে করে আমি প্রতিনিয়ত বাজারে এ জাতের ছাগল বিক্রি করে আমার সংসারের অসুবিধা আরও অন্যান্য কাজে আমার সহয়তা হয়। আমাদের এ জাতের ছাগল লালন পালন করতে আমাদের এ জাতের ছাগলের ঘড় নিয়ে অসুবিধা পড়তে হয়। তাই আামাদের একটু উন্নত মানের এ জাতের ছাগলের জন্য ঘড় দিয়ে সহযোগিতা করলে ভালো হয়।

এই ব্লাকবেঙ্গল গোট চুয়াডাঙ্গায় লালন পালন আরও কিভাবে বৃদ্ধি করানো যায় এবং এ জাতের ছাগল লালন-পালন করতে হলে কি করণীয় এই বিষয় জানতে চাওয়া হয়, চুয়াডাঙ্গা উন্নয়ন সরকারি ছাগল খামারের খামার ব্যবস্থাপক আরমান আলী বলেন, আমরা দেখতে পারছি যে ব্লাক বেঙ্গল গোট জাতের ছাগল আগের থেকেই অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা আরো বৃদ্ধি পাবে যদি এ জাতের ছাগল ঠান্ডা আবহাওয়া এদের জন্য ভালো না।

যে কারণে শীত মৌসুমে এ জাতের ছাগলের খুব যত্ন করতে হবে ও ভালোভাবে সচেতন হতে হবে। প্রতিটা এ জাতের ছাগলের জন্য ঘড় হবে একটু উন্নত মানের ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার উচু হতে হবে। তাহলে ঠান্ডা থেকে এরা রেহায় পাবে। এ জাতের ছাগল বাড়াতে হলে একটা করে এ জাতের ছাগি কিনে লালন পালন করে এরা থেকে বংশ বিস্তার হলে এ জাতের ছাগলের একটা ব্রাšড হবে চুয়াডাঙ্গায়।

এই ব্লাকবেঙ্গল ছাগলের খাবারের তালিকায় কি কি গৌ-খাদ্য খাওয়াতে হবে এবং কী কাঁচা ঘাস খাওয়ালে এ ছাগলের উন্নতি প্রশার ঘটানো যায় এ বিষয় জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা উন্নয়ন সরকারি ছাগল খামারের পরিচর্যা এক কর্মি বলেন, এ জাতের ছাগল মুলত কাঁচা নেপি ঘাস কেতে পছন্দ করে। এদের পাশাপাশি খাবার দিতে হবে ভুট্টা, ভুষি, গোম, আরো দানাদার যুক্ত খাবার। তাহলে এরা দ্রুত বাড়তে পারবে এতে করে এ জাতের ছাগলের বাজারজাক বেশ ভালো পাওয়া যায়। একই ব্লাকবেঙ্গল আরো প্রশার ঘটবে।

ব্লাকবেঙ্গল ছাগলের রোগ তেমন দেখা যায় না। এ জাতের ছাগল আরও বৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা করছে চুয়াডাঙ্গা  প্রাণী সম্পদ কার্যালয়। এই সুত্র ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালযের কর্মকর্তা ডা. মো.মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এই জেলায় আবহাওয়া ভালো হওয়াতে ছাগলের উৎপাদন বৃদ্ধি পারছে। তাই ব্লাকবেঙ্গল এ জাতের ছাগল অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

সামনে আরও সম্প্রসারণ ঘটানোর জন্য আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি যেন এ জাতের ছাগল আরো এ জেলায় বৃদ্ধি পায়। এই সাথে আমাদের এই ঠান্ডায় যেন এ জাতের ছাগলের কোন অসুবিধা না হয় সে জন্য ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান আছে। এতে এ জাতের ছাগলের রোগ বালায় থেকে রেহায় পাবে এ জেলায় আরো এ জাতের ছাগলে সম্প্রসারণের জন্য আমাদের খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর