সোমবার   ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আশ্বিন ৯ ১৪৩০   ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
১১১

পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে দিশাহারা কুষ্টিয়ার দুই উপজেলার মানুষ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২৩  

কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। নদীভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। জেলার মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর তীরবর্তী ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও দেড় কিলোমিটার আয়তনে নদীভাঙনে দিশাহারা এলাকাবাসী। 

ইতোমধ্যে নদীভাঙনে তিনটি ইউনিয়নের ৪টি সম্পূর্ণ মৌজা এবং আরও তিনটি মৌজার আংশিকসহ প্রায় ১৫ হাজার একর ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগ মহাসড়কটি। অন্যদিকে ঝুঁকিতে পড়েছে ভেড়ামারা ৪১০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সময়মতো প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) বাস্তবায়ন না হওয়ায় বছরজুড়ে বিরতিহীন ভাঙনে ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরকারি ব্যয়ের বোঝা। এই তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেই সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ডিপিপি অনুমোদন পেলেই ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।

মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কেরামত মন্ডল বলেন, ‘জায়গা-জমিন, ঘরবাড়ি, গরু-বাছুর সব পদ্মার পেটে চলে গেছে। তিন বছর আগে থেকে নদী যখন ভাঙা শুরু করে, তখন কতজনকে বললাম, কাকতি, মিনতি করলাম, কেউ শুনল না, তারা কোনো গুরুত্বই দিল না। শুরু থেকে যদি এরা কোনো ব্যবস্থা নিত তাহলে আজ এই অবস্থা হতো না। আমার মতো অনেক লোক সবকিছু হারিয়েছে। যে কাজ অল্পতেই হতো, সেই কাজ এখন অনেক বেড়ে গেছে।’

মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মন্ডল জানান, আমার এই ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন এখানে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও তো ওইসব ঘরবাড়ি, জায়গা জমি, রাস্তাঘাট হাটবাজার কোনো কিছুই ফিরিয়ে আনা যাবে না। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার প্রার্থনা জরুরি এই ভাঙন বন্ধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অসীম কুমার সরকার বলেন, তালবাড়িয়া পদ্মা তীরবর্তী ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে তাৎক্ষণিক ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেও কোনো কাজে আসছে না ভাঙন রোধে। তাই দ্রুত প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) অনুমোদনসহ তার বাস্তবায়নই হবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান।

এদিকে পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে দিশাহারা ভেড়ামারা উপজেলা নদী পাড়ের মানুষ। ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠুর অভিযোগ করে বলেন, গত তিন বছর ধরে দুই উপজেলার প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা ও গোটা জনপদকে রক্ষায় এখনই দরকার স্থায়ী সমাধান। নচেৎ একদিনে জনজীবনের জানমালের অপূরণীয় ক্ষতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি ব্যয়ের বোঝা হবে আকাশছোঁয়া।

কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডাক্তার এসএম মুসতানজিদ বলেন, কুষ্টিয়াতে নদীভাঙনের যে সংকট দেখা দিয়েছে, এই সংকট শুরুর দিকে যে আয়তনকে আক্রান্ত করেছিল তখনই যদি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হতো তাহলে ওই দিনে শুরু হওয়া ছোট্ট সংকটটি আজকে এত বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে ধ্বংস হতো না।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি গত দুই বছর আগে এখানে যে ডিপিপি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় প্রেরণ করা হয়েছিল, তার প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৮৯ কোটি টাকা, যা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন না হওয়ায় চলতি অর্থবছরে ওই একই প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে। এবারও যদি প্রস্তাবিত এই উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) অনুমোদনসহ বাস্তবায়ন না হয়ে ফাইল বন্দি থেকে যায়; তাহলে খুব শিগগিরই সরকারি ব্যয় ক্রমবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহাসড়ক, সেচ প্রকল্প, ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও লালন শাহ সেতুসহ সরকারের আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার অবকাঠামোসহ স্থাপনা বিলীন হয়ে যাবে পদ্মার ভেতরে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, পদ্মা নদীর এবারের ভাঙন এতই তীব্রতা পেয়েছে, যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষণিক জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কার্যত ভাঙনের তীব্রতা ঠেকাতে স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে প্রেরিত ডিপিপি প্ল্যানিং কমিশনে যাচায়-বাছাই শেষে একনেক সভায় অনুমোদন পেলেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর