বুধবার   ২২ মার্চ ২০২৩   চৈত্র ৭ ১৪২৯   ২৯ শা'বান ১৪৪৪

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
সর্বশেষ:
ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হলো চুয়াডাঙ্গা জেলা সেবা দ্রুত বাড়াতে ৯৯৯-এ যুক্ত হচ্ছে কলার লোকেশন ট্র্যাকার সব মসজিদে একই পদ্ধতিতে তারাবি পড়ার আহ্বান
৬৪

ছেঁউড়িয়ায় সাঙ্গ হলো লালন স্মরণোৎসব

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২৩  

কুষ্টিয়ায় তিনদিন ব্যাপী লালন স্মরণোৎসব শেষ হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় লালনের কর্মময় জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা আর রাতভর দেশি-বিদেশি শিল্পীদের লালন সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে এ স্মরণোৎসবের।

সমাপনী দিন সোমবার সন্ধ্যায় লালন মঞ্চে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আব্দুর রশিদ।

সোমবার রাতে ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়িতে লালন একাডেমির আয়োজনে লালনের কর্মময় জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আধ্যাত্মিক সিদ্ধ পুরুষ হিসেবে সত্য ও জাতহীন সমাজ গড়তে লালন ফকির আবির্ভূত হয়েছিলেন। লালন সাঁই এক বিশ্ব মানব। কারো কারো মতে নিরক্ষর বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সৃষ্টি গানে গভীর জ্ঞান মানুষকে বিমোহিত করে। তিনি আজকের যুগেও মানুষের হৃদয়ের মাঝখানটা দখল করে আছেন। তাকে নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় গবেষণা হচ্ছে। হচ্ছে তার গানের ভাষান্তর। যুগে যুগে মানুষের কল্যাণে জ্ঞানী-গুণী ও পথ প্রদর্শকদের জন্ম। 

তিনি আরও বলেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই জ্ঞান ভান্ডারে এক অনাবিস্কার পৃথিবী। লালন সাঁই ছিলেন বাঙালি জাতিসত্বা বোধের প্রবাদ পুরুষ। তাকে চিনতে অনেক দেশ বহুভাবে উপস্থাপন করেছেন। আমি নিজেও তার একজন ভক্ত হয়ে উঠেছি। তেমনি কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার পবিত্র মাটিতে লালন সাঁইয়ের মত মহাত্মা মহাজ্ঞানীর জন্ম হয়েছে। মানবজনমের পূর্নজন্মে লালন কোন ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন না। লালন সাঁই সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন। বক্তব্যের মাঝে তিনি দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করতে লালন সাঁইয়ের বিখ্যাত গান “মিলন হবে কত দিনে,আমার মনের মানুষের সনে” গেঁয়ে শোনান।

আলোচনার শুরুতে এবং শেষে অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমির পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, আত্মসুদ্ধির প্রতীক একতারা ও নবনির্মিত একতারার ক্রেস্ট ও উত্তরীয় উপহার দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। 

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নওরোজ হাসান তালুকদার, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, কুষ্টিয়া জজ আদালতের জিপি এ্যাড.আখতারুজ্জামান মাসুম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার প্রফেসর ড.সেলিম তোহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব রফিকুল আলম টুকু, কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট নাট্য ব্যাক্তিত্ব আমিরুল ইসলাম, গাজী মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।

ফকির লালন সাঁইয়ের আধ্যাত্মিকতা তুলে ধরে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসার ড. সরোয়ার মুর্শেদ রতন। আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট লালন গবেষক ও লেখক এ্যাড. লালিম হক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাসরিন বানু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির এ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের এনডিসি শাহেদ আরমান।

এবারের বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ৩ দিনব্যাপী স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠানে আসা দেশ-বিদেশের লাখ ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরুদের চরণ ধূলায় সিক্ত বাউল সম্রাটের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ী। সাঁইজির মতাদর্শের ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে মানুষ নিবেদিত থাক চিরকাল এবং মানবতার নিগুড়
প্রেমের ভাবধারা বর্তমান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ভক্তকুলের অঙ্গীকার।

সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেষ ভুলে সাঁইজির জাতহীন মানব দর্শনের “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি” এই স্লোগানকে বাস্তবায়নে সদা সত্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে হবে। মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের অহিংস মানবতা ও ফকিরী মতবাদের জাতহীনমানব দর্শন ও সঙ্গীত দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বাঙ্গনে নিজের মহিমায় জায়গা করে নিলেও বাংলা ভাষা ব্যতিত অন্য কোন ভাষায় প্রকাশ, প্রচার ও প্রসার ঘটেনি তেমন একটা। এ ব্যাপারে আরও উদ্দ্যেগী হতে হবে।

লালন একাডেমির সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ৩ দিনব্যাপী স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠান সফল স্বার্থক ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ, র‌্যাব, স্থানীয় সেচ্ছাসেবকবৃন্দ, দেশ-বিদেশ থেকে আসা লালন সাঁইয়ের অগণিত ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরু, সাংবাদিকসহ এলাকার সুধীজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও ধন্যবাদ জানান।

আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন সংগীত পরিবেশিত হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন উপহমাদেশের প্রখ্যাত লালন সঙ্গীত শিল্পী চন্দনা মজুমদার, শাহানাজ বেলি, বাউল শিল্পী সমীর বাউলসহ দেশের খ্যাতিনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমির স্থানীয় শিল্পিরা। ৩ দিনব্যাপী স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠানমালার সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিফাতুন নাহার ও কাজী শারমিন নেওয়াজ। লালন সংগীত অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ফারহানা ইয়াসমিন ও কনক চৌধুরী। 

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর দোল পূর্ণিমার তিথিতে লালন তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর পবিত্র শবে বরাতের কারণে এ অনুষ্ঠান এগিয়ে নিয়ে ৪, ৫ ও ৬ মার্চ নির্ধারণ করা হয়। অনুষ্ঠান এগিয়ে নিয়ে আসা এবং পবিত্র শবে বরাতের কারণে এবার লোকসমাগম অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে। লালন সাঁই জীবিত থাকা দোল পূর্ণিমা তিথিতে তার শিষ্যদের নিয়ে রাতভর গানের অনুষ্ঠান করতেন। লালন শাহের মৃত্যুর পর সেই ধারাবাহিকতা চলে আসছে। 

এদিকে তিন দিনের এই অনুষ্ঠান সোমবার রাতভর গান বাজনার মধ্য দিয়ে শেষ হলেও সকাল থেকেই অনেক ভক্ত বাউলদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে লালনের আখড়াবাড়ি ত্যাগ করতে দেখা গেছে।  

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর