বুধবার   ২২ মার্চ ২০২৩   চৈত্র ৭ ১৪২৯   ২৯ শা'বান ১৪৪৪

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
সর্বশেষ:
ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হলো চুয়াডাঙ্গা জেলা সেবা দ্রুত বাড়াতে ৯৯৯-এ যুক্ত হচ্ছে কলার লোকেশন ট্র্যাকার সব মসজিদে একই পদ্ধতিতে তারাবি পড়ার আহ্বান
১৭৭

চুয়াডাঙ্গায় তামাক চাষে বাধ্য করা হচ্ছে চাষিদের!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২৩  

চুয়াডাঙ্গায় ব্রিটিশ কোম্পানির নীল চাষের আদলে তামাক চাষ করিয়ে নিচ্ছে টোবাকো কোম্পানিগুলো। সুযোগ-সুবিধা আর নানা প্রলোভন দেখিয়ে তামাক চাষে উৎসাহিত ও অন্য লাভজনক ফসল চাষে নিরুৎসাহিত করছে কোম্পানিগুলো। টোবাকো কোম্পানির মিথ্যা আশ্বাসের ফলে কৃষকরা প্রতি বছর লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গার মাঠ জুড়ে চাষ হচ্ছে তামাক আর তামাক। নিষিদ্ধ হলেও টোবাকো কোম্পানি কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে তামাক চাষে আগ্রহী করে তোলে। কিন্তু তামাক বিক্রির সময় নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় কৃষকদের। তামাক পাতার রঙ খারাপ, ভেজা, ছেঁড়া পাতা, পোড়া পাতা, ৪টি গ্রেডে ভাগসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে ওজন ও দাম কম দেয়া হয় কৃষকদের। ফলে প্রতি বছর লোকসানের মুখে পড়তে হয় কৃষকদের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে লাভজনক ফসল চাষের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ মৌসুমে ২১৯ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। সদর উপজেলায় ৮ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৮৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৯১ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণা চালিয়েও কোনভাবেই বন্ধ করতে পারছে না তামাক চাষ।

তামাক চাষ নিষিদ্ধ হলেও একটি চক্র নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে কৃষকদের নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে উৎসাহ যোগাচ্ছে টোবাকো কোম্পানির সহায়তায়। প্রতি হেক্টর জমিতে শুকনা পাতা উৎপাদন হবে ২.৫ মেট্রিক টন। এ মৌসুমে ২১৯ হেক্টর জমি থেকে ৫৪৮ মেট্রিক টন শুকনা তামাক পাতা উৎপাদন হবে।

তামাক চাষ নিষিদ্ধ হলেও টোবাকো কোম্পানির প্রতিনিধিরা নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকদের চাষে বাধ্য করছে প্রতি বছর। কারণ কোম্পানিগুলো তামাক চাষের জন্য শুরুর দিকে কিছু উপকরণ দিচ্ছে বাকিতে।

ভাদ্র মাসের প্রথমে বীজতলায় বীজ বপনের দেড় মাস পর চারা তৈরি হয়। জমি প্রস্তুতের পর চারাগুলো আশ্বিন-কার্তিক মাসের মধ্যে রোপণ করতে হয়। নিয়মিত তামাক ক্ষেতগুলো পরিচর্যা করতে হয়। মাঘ-ফাল্গুন মাস পর্যন্ত গাছ থেকে কৃষকরা তামাক পাতা সংগ্রহ করে বাঁশের কাঠির সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে। তারপর সবুজ তামাক পাতাগুলো বদ্ধ ঘরে অথবা উঠানে রেখে জাগ দিতে হয় বেশ কিছু দিন। পরে তামাক ঘরে আগুনের হিট দিয়ে পাতার রঙ খয়েরি করা হয়। তামাক ঘর থেকে বের করে আটি বেঁধে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়।

পরে কোম্পানির কার্ডধারি চাষিদের কাছ থেকে তামাক পাতা সংগ্রহ শুরু করে কোম্পানি প্রতিনিধিরা। তামাক পাতা সংগ্রহের সময় নানা অজুহাত দেখায় কোম্পানির তারা। ছেড়া, ভেজা, রঙ হালকাসহ নানা যুক্তি উপস্থাপন করে। ভেজা থাকলে প্রতি ৭০ কেজি তামাক বেলের ওজন হিসেব করা হয় মাত্র ৫৫ কেজি। শুকনা তামাক পাতার ক্ষেত্রেও ২ কেজি ওজন কম হিসেব করা হয় বলে জানান কৃষকরা।

কৃষকরা তামাক পাতাগুলো বেল (আটি) তৈরি করে বিক্রির জন্য টোবাকো কোম্পানির ডিপোগুলোতে নিয়ে যায়। তারা মনগড়া ৪টি গ্রেডে বিভক্ত করে। প্রতি কেজি তামাক রঙ ও মান ভেদে ১১০-১৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ৮০-৯০ হাজার টাকা। গত বছর বিঘা কৃষকদের তামাক বিক্রি করে ১০-১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়।  এ বছর ডিজেল, সার, শ্রমিক, কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের দ্বিগুণ। ফলে এ মৌসুমে তামাক পাতা ২০০ টাকা কেজি দরে কৃষকরা বিক্রি করতে না পারলে বিঘায় ৩০-৪০ হাজার টাকা লোকসানের মুখে পড়বেন।

তামাক চাষিরা বলেন, টোবাকো কোম্পানির লোকেরা চাষের আগে আপন ভাইয়ের মতো ব্যবহার করে। কিন্তু বিক্রির সময় শত্রু হয়ে যায়। তামাক ডিপোতে নিয়ে গেলে কাঁচা বলে ওজনে কম দেয়। তামাকের শেষ বেল যখন কোম্পানিতে নিয়ে গেলে তখন সর্বোচ্চ দাম দিয়ে বলে আগামীতে আর বেশি দাম পাবেন। তাই বেশি বেশি তামাক চাষ করবেন।

ঝিনাইদহ অঞ্চলের লিফ অফিসার মো. জুলফিকার ইসলামের কাছে তামাক চাষ ও কৃষকদের হয়রানির বিষয়ে জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিক বার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সিভিল সার্জন ডা. মো. সাজ্জাৎ হোসেন জানান, তামাকজাত পণ্য মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পান, সিগারেটসহ অন্য তামাকজাত পণ্য সেবন করলে ক্যানসার, হার্টঅ্যাটাক, ফুসফুস, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে সেবনকারীরা। সরকারের আইনকানুন মেনে চলতে হবে। তামাকজাত পণ্য বর্জন করতে হবে। মানব সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বেসরকারি উদ্যোগে তামাক চাষ বন্ধের ব্যাপারে কাজ করতে হবে সকলকে। তামাক উৎপাদন না হলে তামাকজাত পণ্য তৈরি হবে না।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, লাভজনক ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে কাজ করছি। তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো কৃষকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। তামাক থেকে কৃষকরা এক সময় মুখ ফিরিয়ে নেবে। ফল, সবজি, ভুট্টাসহ অন্য লাভজনক ফসল চাষে কৃষকরা ঝুঁকছে।

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর