সোমবার   ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আশ্বিন ৯ ১৪৩০   ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
৭৭

গড়াই রেলসেতু’ বাংলাদেশের প্রথম বড় রেলসেতু

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২৩  

বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রতিষ্ঠিত সর্বপ্রথম মেজর ব্রিজ হলো গড়াই রেলসেতু। সবচেয়ে বড় এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয় কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালির গড়াই নদীর উপর।

ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক নির্মিত গড়াই রেলসেতুটি বাংলাদেশ ভূখণ্ডের প্রথম মেজর রেলওয়ে ব্রিজ। সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৮৬৫ সালে এবং এই সেতুর মাধ্যমে গড়াই নদীর উভয় পাড়কে সংযুক্ত করে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সেকশন চালু হয় ১ জানুয়ারি ১৮৭১ তারিখে।

স্টিল পাইল ফাউন্ডেশনের উপর নির্মিত এটিই বাংলাদেশের প্রথম সেতু। ৮টি পিয়ারের উপর স্থাপিত এর ৭টি মেজর স্প্যান (১৮৫ ফুট করে প্রতিটি) এবং পশ্চিম প্রান্তে সংযুক্ত একটি ভায়াডাক্ট মিলিয়ে সেতুটির সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৫১৫ মিটার। সেতুটির উপর একটি ব্রডগেজ রেললাইন রয়েছে। সেতুটির সুপারস্ট্রাকচার হিসেবে Pratt Steel Truss দিয়ে ৭টি স্প্যান নির্মিত হয়েছে, যেগুলো পিয়ারের উপর বসানো হয়েছে Rocker টাইপ বিয়ারিং দিয়ে। পশ্চিম প্রান্তের ভায়াডাক্টটি স্টিল বক্স গার্ডারের তৈরি এবং Shear Pad বিয়ারিং এর উপর বসানো।

পোড়াদহ-গোয়ালন্দ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের Chief Resident Engineer Sir Bradford Leslie এর নকশায় ও তত্ত্বাবধানে গড়াই রেলসেতু নির্মিত হয়, যাকে ভারতীয় উপমহাদেশে বড় রেলব্রিজ নির্মাণের একজন সফল কারিগর হিসেবে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। উল্লেখ্য কলকাতার বিখ্যাত জুবিলি ব্রিজ তার ডিজাইন করা (১৮৮৭)। এর আগে আলমডাঙ্গার কুমার নদের উপর রেলব্রিজ (১৮৬২) এবং বনগাঁর ইছামতি নদীর উপর রেলব্রিজও (১৮৮৪) তাঁর তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়। 

ব্রিটিশ আমলে গড়াই রেলসেতুর গুরুত্ব ছিলো ব্যাপক। এই রেলসেতু ব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকা ও কলকাতার মাঝে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা অনেক সহজ হয়ে আসে। ঢাকা সদরঘাট অথবা নারায়ণগঞ্জ ঘাট থেকে লঞ্চে চেপে গোয়ালন্দ ঘাটে নামলে সেখান থেকে ট্রেনে সরাসরি কলকাতা চলে যাওয়া যেতো।

পরবর্তীতে গার্ডারগুলো দুর্বল হয়ে পড়লে একটা সময় সেতুতে ট্রেন চলাচলের অনুমোদিত গতিতে রেস্ট্রিকশন আরোপ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোয়ালন্দ সেকশনের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা-আরিচা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প শুরুর প্রাক্কালে, গড়াই রেল ব্রিজটি সংস্কারে ৭০ লাখ রুপির একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরে ঢাকা-আরিচা প্রকল্প বাতিল হয়ে গেলে এই রেলসেতুটির সংস্কার কাজও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।

অবশেষে ১৯৩৬ সালের সেপ্টেম্বরে সেতুটির গার্ডার প্রতিস্থাপন ও পিয়ারগুলোর সংস্কারে একটি সংশোধিত প্রকল্প জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয় রেলওয়ে বোর্ড থেকে ১২.৭০ লাখ রুপির বাজেটে। দায়িত্ব দেওয়া হয় ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার Aldwin Smaller-কে। সে বছর ৩টি এবং পরবর্তীতে ১৯৩৭-৩৮ সালে বাকি ৪টি স্প্যান প্রতিস্থাপন করা হয়। এই স্প্যানগুলোই বর্তমানে আমরা গড়াই সেতু অতিক্রমের সময় দেখতে পাই, যা এখনো সগর্বে টিকে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে।

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর