শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১   ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
২৫৩

সুখসাগর পেঁয়াজ বীজ চাষে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের কৃষকরা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

মেহেরপুরে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে সুখসাগর পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে সফল হয়ে লাভবান হচ্ছেন জেলার স্থানীয় কৃষকরা।

একটা সময় ছিল পেঁয়াজের বীজ বপণের মৌসুম আসলেই আমদানি করা পেঁয়াজের বীজের জন‍্য অপেক্ষা করা লাগত। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক সময় অসাধু ব‍্যবসায়ীরা নিম্নমানের বীজ কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়ায় বির্পযয়ের মুখে পড়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে কৃষকদের। আবার ভালো বীজের আশায় বীজ সংকটকের সময় অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে পেঁয়াজের বীজ।

কৃষকরা বলছেন, নিজেদের উৎপাদিত পেঁয়াজের বীজে ঝুঁকি কম থাকে, ফলনও ভালো হয়। এতে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়।

কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকরা নিজ উদ্যোগে বীজ উৎপাদন করে সফল হওয়ায় আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে। এতে উৎপাদন ব‍্যায়টাও কমে যাবে। নিজেদের বাড়ির বীজ হওয়াই সঠিক সময়ে বীজ বপণও করতে পারবে। তাই বীজ উৎপাদনে চাষিদেরকে প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তাও করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ২৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ৬০০ টন। এটি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি করা হবে।

জেলার মুজিব নগর ও সদর উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলার সদর ও মুজিব নগর উপজেলায় বিগত পাঁচ বছর যাবত সুখসাগর পেঁয়াজের চাষ করছেন সেখানকার চাষিরা। অন্যান্য যেকোনো জাতের পেঁয়াজ চাষের তুলনায় কম খরচে অধিক ফলন পাওয়া যায় সুখসাগর জাতের পেঁয়াজে। এই এলাকাগুলোতে আরও বেশ কয়েকটি জাতের পেঁয়াজ চাষ ও বেশ জনপ্রিয় তাদের মধ‍্যে অন‍্যতম তাহেরপুরি, বারি ৪, নাসিকা রেড ও ফিপটি।

তবে আকারে বড় অধিক ফলন ও বীজ উৎপাদনের পাশাপাশি পেঁয়াজ ও পাওয়ায় এক খরচে দুই ফলন। ফলে খরচের তুলনায় বেশি লাভবান হওয়া যায় এ সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ চাষে।

তাই বেশ কয়েক বছর এ জাতটি পেঁয়াজ চাষিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে বীজটি যখন আমদানি নির্ভর ছিল। তখন ভরা মৌসুমে বীজ পেতে চাষিদের বেশ বেগ পেতে হতো। আবার বীজ সংকটের কারনে দ্বিগুন দাম দিয়ে কিনতে হতো।

শুধু বপনকালীন বীজ সংকট কিংবা বেশি মূল্য দিয়ে বীজ কেনা নয়। কতিপয় অসাধু ব‍্যাবসায়ীরা কৃষকদের চাহিদাকে পুঁজি করে ভেজাল বীজ বিক্রয়ের ফলে ফলন বিপর্যয়ে চাষিদের লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে বীজ উৎপাদন হওয়াই চাষিদের আর এই সকল সমস‍্যার সম্মুখীন হতে হবে না বলেও কৃষকরা মনে করেন।

মুজিব নগর গ্রামের কৃষক জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয়ে থাকে ২৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। আবার বীজ সংকট দেখা দিলে এর চেয়ে বেশি দামেও কেনা লাগে। আর জমিতে বীজ ভালো হলে প্রতি বিঘা জমিতে ৮০ থেকে ৯০ কেজি পযর্ন্ত বীজ পাওয়া সম্ভব।

একই এলাকার পেঁয়াজ চাষি রাজিবুল বলেন, ‘সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ আবাদ মানে একসঙ্গে দুই ফসল পাওয়ার মতো। শুধু বীজ নয়, ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করার পর গাছ থেকে পেঁয়াজ পাওয়া যায়। প্রতি বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ মণ পেঁয়াজ পাওয়ার পাশাপাশি ৬০ থেকে ৭০ মণ পযর্ন্ত বীজ পাওয়া সম্ভব।

মেহেরপুর সদর উপজেলার কৃষক আরমান আলী বলেন, ‘আমাদের একটা সময় গেছে পেঁয়াজ চাষের ভরা মৌসুম আসলেই বীজের সংকট দেখা দিত। এতে আমরা অনেক সময়, সঠিক সময়ে বীজ বপণ করতে পারিনি। আবার বাজারে বীজ থাকলেও অধিক দামে কেনা লাগছে। আজ দুই বছর মত হবে নিজেদের বীজ থেকেই পেঁয়াজ চাষ করছি। ঘরের বীজ, তাই বীজ নিয়ে টেনশন করতে হয় না।’

একই এলাকার আরেক চাষি রশিদ বলেন, আমি দুই বছর আগে বাজার থেকে সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের বীজ কিনে এনে প্রতারিত হয়েছি। মাঠে বীজ বপণের পরে অর্ধেকের কম হবে, কোনো ফলনি পাইনি।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, মেহেরপুরের আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন‍্য বেশ উপযোগী। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ২৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ৬০০ টন। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি করা হবে এ পেঁয়াজ।

সাধারণত বছরের নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ বীজ বপন করা হয়ে থাকে। জানুয়ারি মাসের দিকে পেঁয়াজ বাজারজাত করা হয়। আর বীজ উৎপাদন হয় মার্চ মাসের শেষের দিকে। সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা দুই সুবিধা পাচ্ছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি বীজ পাওয়া যায়। ফলে প্রতিনিয়তই জেলার কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকছে। তাছাড়া পেঁয়াজ উৎপাদন না বাড়ালে আমদানি নির্ভরতা থেকে বের হওয়া আসা সম্ভব হবে না। তাই কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শের পাশাপাশি প্রনোদণাও দেয়া হচ্ছে।

 কুষ্টিয়ার  বার্তা
 কুষ্টিয়ার  বার্তা
এই বিভাগের আরো খবর